কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে আজকে আপনাদের কিছু তথ্য দেব।
কালোজিরা মানুষের কাছে অনেক উপকারী একটি ঔষধ, হিসাবে পরিচিত। কালোজিরা ছোট ছোট
কালো দানা গুলোর মাঝে মহান সৃষ্টিকর্তার এক বিশাল উপকারী গুণগত ক্ষমতা প্রদান
করেছেন যা সত্যি বিস্ময়কর। আদিকাল হতে শুরু করে আজ অব্দি কালোজিরা মানুষের
শরীরের নানান জটিল রোগের প্রতিরোধক ও প্রতিশোধক হিসেবে কাজ করে আসছে।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) বলেছেন, তোমরা কালোজিরা নিয়মিত সেবন করবে কেননা
একমাত্র কালোজিরায় রয়েছে মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের মহৌষধি গুণ। কালোজিরায়
রয়েছে অনিন্দা,চুলপড়া,মাথাব্যথা মাথা ঝিমঝিম করা, মস্তিষ্ক শক্তি তথা
স্মরণশক্তি বাড়ানো,মুখশ্রী ও সৌন্দর্য রক্ষা,অবসন্নতা-দুর্বলতা,অলসতা ও
নিষ্ক্রিয়তা খাবারের অরুচি সহ সকল প্রকার রোগের মহৌষধি গুনাগুন।
পেজ সূচিপত্র: কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম গুলো
- কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম গুলো
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে কালোজিরার উপকারিতা
- কালোজিরা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে
- চুল পড়া রোধে কালোজিরার উপকারিতা
- কালোজিরা সেবনে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ হয়
- কালোজিরা হজমের সমস্যা দূর করে
- হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রনে কালোজিরা
- চোখের সমস্যায় কালোজিরার ব্যবহার
- হাঁটু ও পিঠের ব্যথায় কালোজিরার উপকারিতা
- যৌন সমস্যা সমাধানে কালোজিরার উপকারিতা
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম গুলো
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম গুলো আমরা দুই ভাবে কালোজিরা খেয়ে থাকি। প্রথমে কালোজিরা
দানা শুধু কাঁচা চিবিয়ে খায় আর দ্বিতীয়টি হল অন্য কোন কিছুর সাথে মিশিয়ে বা
পিষিয়ে কালোজিরা খেয়ে থাকি আবার বিভিন্ন জন কালোজিরা
মধু,রসুন,হলুদ,পুদিনা-পাতা,তুলসীপাতা ইত্যাদির সাথে মিশিয়ে খায়। আর এভাবে
কালোজিরা খাওয়ায় রয়েছে অনেক উপকারিতা। কালোজিরা খাওয়ার অন্য আর একটা নিয়ম হল
কালোজিরা গুঁড়ো করে পেয়ারা পাতার রসের সাথে মিক্স করে খাওয়া। এলার্জি রোগী
মানুষের জন্য কালোজিরা ও পেয়ারা পাতার রস অনেক উপকারিতা।
আরো পড়ুন:৩০০০০ টাকার মধ্যে ভালো ফ্রিজ
তাছাড়া কালোজিরা তেলের সাথে এক কাপ পরিমাণ পুদিনা পাতার রস করে এবং কমলা লেবুর
রস মিশিয়ে কালোজিরা মিশ্রণ করে খাওয়া যেতে পারে। এর ফলে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা
দূর হবে। মধু ও কালো জিরা মিশ্রিত করে খাওয়ার ও আরেকটি নিয়ম রয়েছে কালোজিরা
মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে সর্দি-কাশি অল্প হলেও নিরাময় হয়। প্রতিদিন কয়েকবার এ
কালোজিরা ও মধু একসাথে খেলে শরীরের জন্য খুবই উপকারি।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে কালোজিরার উপকারিতা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কালোজিরার উপকারিতা বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিসের
রোগীর সংখ্যা অনেক। আর এ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে কালোজিরা গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে থাকে। ডায়াবেটিস রোগ নিরাময়ে অনেক কাজে লাগে কালোজিরা।
কালোজিরা রক্তে উপস্থিত গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। সে জন্য ডায়াবেটিস
রোগীদের পুনরায় ঔষধ সেবন করা দরকার হয় না ডায়াবেটিস রোগীর উপকার পেয়ে থাকে
কালোজিরার মাধ্যমে।
কালোজিরা ডায়াবেটিস রোগীদেরকে খালি পেটে খাওয়া শরীরের পক্ষে ভালো। তাই নিয়মিত
কালোজিরা ডায়াবেটিস রোগীদেরকে সেবন করা উচিত। শরীরের সুস্থতা রক্ষা করতে
কালোজিরা আদিকাল হতে আজ অব্দি গুরুত্বপূর্ণ উপকারী ভূমিকা পালন করে। তাই নিয়মিত
কালোজিরা খেয়ে আপনারা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
কালোজিরা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে
কালো জিরা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে তাই আমাদের জীবন চলার পথে
প্রতিনিয়ত নানা ধরনের কাজে চাপ ও ব্যস্ততার ফলে মানুষের ব্রেন শক্তি একঘেয়ে
হয়ে পড়ে এবং একটা সময়ে কম বেশি সবকিছুই মানুষ ভুলতে শুরু করে বা স্মরণ রাখতে
পারে না। এমন সমস্যার সমাধান করতে পারে কালোজিরা। কালোজিরার অনেক গুনাগুন আছে।
কালোজিরা একটি অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টি সেপটিক হিসেবে কাজ করে থাকে। মানুষের
মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করার মাধ্যমে কালোজিরার স্মরণ শক্তি বাড়িয়ে
তুলতে উপকারী ভূমিকা রাখ।
আরো পড়ুন:২০০০০ টাকার মধ্যে ভাল ফোন
কালোজিরা আমাদের শরীরের অনেক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় তাই নিয়মিত কালোজিরা
সেবন করা উচিত। তাছাড়াও কালোজিরার অনেক গুণাবলী রয়েছে যেমন- চুল পড়া, ব্লাড
প্রেসার নিয়ন্ত্রণ ,হজম শক্তি বৃদ্ধিতে, ত্বকের যত্নে, কিডনি সমস্যা সমাধানে ও
যৌন সমস্যা সমাধানে কালোজিরা অনেক উপকারী একটা জিনিস।
চুল পড়া রোধে কালোজিরার উপকারিতা
চুল পড়ায় এখনকার মানুষের একটি নিত্য দিনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। আবার চুল
পড়া রোধে তৈরি করেছে নানা ধরনের উপায়। চুল পড়া রোধে সবচেয়ে সহজ ও কার্যকরী
সমাধান পাওয়া গেছে কালোজিরা। প্রথমে একটি মাঝারি আকারের লেবুর অর্ধেকটা কেটে
লেবুর রস বের করে নিতে হবে, তারপর লেবুর রসের ৩-৪ চামচ লবণ মিশিয়ে নিতে হবে
ভালোভাবে। লেবুর রসের সাথে লবণ ভালোভাবে মেশানো হলে এই রসের পুরোটা মাথায়
লাগিয়ে ৩০ মিনিট সময় রেখে সম্পূর্ণ মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে এর ফলে চুলে মিশে থাকা
সকল ময়লা জীবাণু ও খুশকি খুব সহজেই দূর হয়ে যাবে।
এবার মাথার চুল ভালো করে শুকাতে হবে, চুল শুকানো হলে মাথায় কালো জিরা তেল লাগাতে
হবে। আবার দুইদিন পরপর লেবুর রস এবং লবন মিশিয়ে মাথা ধুয়ে কালোজিরা তেল লাগাতে
হবে। কালোজিরা তেলে অনেক উপকারিতা থাকে, এর ফলে ৩-৪সপ্তাহের মধ্যেই মাথার চুল
পড়া রোধ করা সম্ভব হবে। তাই নিয়মিত কালোজিরার তেল ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল
পাওয়া যাবে।
কালোজিরা সেবনে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ হয়
কালোজিরা সেবনে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ হয়। আমরা যদি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে
উঠে দুইটি বা তিনটি রসুন কোষ চিবিয়ে নিলে এবং সমস্ত দেহের মাঝে কালোজিরা তেল
মালিশ করে সূর্য তাপে কমপক্ষে ৩০ মিনিট থাকি এবং ১ চা চামচ কালোজিরা তেলের সাথে
একটা চামচ পরিমাণ মধু মিশ্রিত করে প্রতি সপ্তাহে ২-৩ দিন খেলে ব্লাড প্রেসার
নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
এভাবে কালোজিরা প্রতিদিন খাওয়া সম্ভব না হলেও দুই একদিন পরপর ও কালোজিরা খাওয়া
যাবে,এতে করে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাছাড়াও কালোজিরা সেবনে,
আমাদের শরীরে অনেক রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই শরীর সুস্থ রাখতে
আপনি প্রতিদিন কালোজিরা খেতে পারেন।
কালোজিরা হজমের সমস্যা দূর করে
কালোজিরা হজম সমস্যা দূর করে থাকে। আজকাল প্রতিটি ঘরে ঘরে এসিডিটি বা বদহজম হয়ে
থাকে। তাছাড়াও এসিডিটি বা হজমের সমস্যা হলে এখন আর টাকা খরচ করে ওষুধ কিনতে হবে
না। কালোজিরা মোটামুটি আমাদের সবার ঘরে থাকে। আর এই কালোজিরা আজ থেকে সবার ঘরে
ব্লেন্ড করে রাখবেন।
এসিডিটি বা হজম জনিত কোন সমস্যার দেখা দিলে একগ্লাস গরম দুধে২-৩ চামচ কালোজিরা
গুঁড়ো মিশিয়ে পান করে নিলে সাথে সাথেই উপকার পাওয়া যায়। আর বদহজমের বা
এসিডিটির উপদ্রব অনেক কমে যাবে এবং ভালো সুফল পাওয়া যাবে, তাই নিয়মিত
কালোজিরা সেবন করুন।
হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে কালোজিরা
হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণের কালোজিরা হল একটি প্রাকৃতিক উপাদান। শ্বাসকষ্ট
বা হাঁপানি রোগীদের জন্য কালোজিরা কে অত্যাবশকীয় উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়।
কালোজিরা হলো হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট সমস্যা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
থাকে।প্রতিটা ঘরে কালোজিরা রাখা উচিত।
আমরা কালোজিরার অনেক উপকারিতা পেয়ে থাকি। হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট সমস্যা
জনিত রোগীদেরকে প্রতিদিন যদি ১ চা চামচ কালোজিরা তেলের সাথে একগ্লাস দুধ মিশ্রিত
করে খাওয়ানো যায়। তাহলে খুব দ্রুত শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর হয়ে থাকে।
তাছাড়াও নিয়মিত যদি আমরা খাদ্যের তালিকায় কালোজিরা ভর্তা রাখলে হাঁপানি বা
শ্বাসকষ্ট রোগ নিয়ন্ত্রণ করা খুব সহজেই সম্ভব হয়ে থাকে।
চোখের সমস্যায় কালোজিরার ব্যবহার
চোখের সমস্যায় কালোজিরার ব্যবহার হয়ে থাকে। চোখ ব্যথা, চোখ ঝাপসা দেখা, চোখ
জ্বালা পোড়া সমস্যা দূর করতে কালোজিরা ব্যবহার করা হয়। চোখের সমস্যায় কালোজিরা
ব্যবহারে আমরা খুব ভালো একটি উপকারিতা পাই। চোখ ব্যথা হলে চোখের পাতা, চোখের দুই
পাশে কালো জিরা তেল মালিশ করতে হবে প্রতিদিন ঘুমানোর আগে।
চোখ ঝাপসা লাগলে, গাজর ব্লেন্ড করে এক কাপ পরিমাণ গাজরের জুস নিতে হবে এবং ৩ চা
চামচ কালোজিরা তেল মিশ্রিত করে খেতে হবে টানা ৩০ দিন ভোরে বা ঘুমানোর পূর্বে।
চোখের জ্বালা পোড়া বেশি হলে দুই টুকরো গাজর ৪/৫ টুকরো শসা এবং ৪ চা চামচ
কালোজিরা ব্লেন্ড করে নিতে হবে ও কালোজিরা মিশ্রণের সাথে যোগ করতে হবে ২ চা চামচ
মধু। এভাবে কালোজিরা মিশ্রণ ঠিকমত দিনে দুইবার খেলে চোখ জ্বালাপোড়া দূর হয়ে
যাবে
হাটু ও পিঠ ব্যথায় কালোজিরার উপকারিতা
হাঁটু ও পিঠ ব্যথা নিরাময়ে কালোজিরা অনেক উপকার হিসেবে কাজ করে থাকে। যাদের বয়স
৫০ বা ৬০ এর বেশি অথবা এর একটু কম তাদের হাঁটু ব্যথা পেট ব্যথা প্রায় প্রতিদিনের
সাথী। আমাদের প্রত্যেকের ঘরে ঘরে কালোজিরা রাখা উচিত। তাছাড়া এই সকল ব্যথা থেকে
মুক্তি লাভের জন্য ব্যবহার করতে হবে কালোজিরা।
২ কাপ কালোজিরা তেলের সাথে ৩ টুকরো আদা এবং ৩-৪ টুকরো হলুদ মিশে নিন,১চা
চামচ সরিষার তেলের সাথে ১০-১৫ মিনিট গরম করতে হবে। তারপরে তেলটি ঠান্ডা করে নিয়ে
বোতলে সংরক্ষণ করতে হবে। হাঁটু ও পিঠ ব্যথার জায়গায় তেলটি মালিশ করলে সাথে সাথে
ব্যথা কমে যাবে এবং তেলটি প্রতিদিন ব্যবহার করলে দীর্ঘ সময়ের সব ব্যথা নিরাময়
হবে।
যৌন সমস্যা সমাধানে কালোজিরার উপকারিতা
কালোজিরা যৌন সমস্যা সমাধানে খুব উপকারি জিনিস। কালোজিরা সেবন করলে নারী ও পুরুষ
উভয়ের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কালোজিরা যৌন সমস্যার সমাধান প্রতিরোধ করে।
কালোজিরা নিয়মিত খাবারের সাথে খেলে পুরুষ স্প্যাম সংখ্যা বেড়ে যায় এবং
পুরুষত্বহীনতা দূর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
১ চা চামচ মাখন, ১ চা চামচ কালোজিরা মধুসহ প্রতিদিন ৩ বার ৪/৫ সপ্তাহ খেতে পারলে
যৌন সমস্যার দ্রুত সমাধানে উপকারিতা মিলবে। তাই আমাদেরকে কালোজিরা নিয়মিত
ব্যবহার করতে হবে
শেষ কথা
পরিশেষে বলা যায় যে আমার এই আর্টিকেলটিতে আপনি কালোজিরার খাওয়ার নিয়ম ও
উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়
স্বজনের কাছে আমারআর্টিকেলটি শেয়ার করে দেবেন। আর আমার এ আর্টিকেলটি পুরোটা
পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।