হলুদের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

হলুদ অতি প্রাচীন একটি মশলা জাতীয় উদ্ভিদ ঔষধি গুনাগুন হিসেবে বিশেষ অবদান রাখে। তাছাড়া হলুদ ত্বকের যত্নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হলুদের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। 

হলুদ হল এমন একটি মসলা জা নানাভাবে আমাদের শরীরের জন্য উপকার নিয়ে আসে। হাজার বছর ধরে এটি মসলা ও ঔষধি ভেষজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চলুন আর দেরি না করে হলুদের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।

পেজ সূচিপত্র: হলুদের উপকারিতা


হলুদের উপকারিতা

হলুদের যে সকল ওখান থেকে আমরা উপকারিতা পেয়ে থাকি তা নিম্নে তুলে ধরা হলো-
  1. আন্টি ইনফ্লেমেটারি গুণ যে কোন ক্ষতিকারক সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে, হলুদের হয়েছে জীবাণুন নাশক গুণ।
  2. হলুদ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি বাড়ায়, রক্তে শর্ট করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  3. ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ব্রণ ধর্মগ্রন্থ ও দাগ দূর করে, পেটের গ্যাস হলেও হলুদ হজম করতে সহায়তা করে। 
  4. হলুদ রক্ত পরিষ্কার করে, স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, এছাড়া ওজন কমাতে ও হলুদ অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  5. ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে, চুল পড়া কমায় ও চুলের স্বাস্থ্য উজ্জ্বল করে, ঠান্ডা ও কাশি নিরবে হলুদ অত্যন্ত কার্যকরী অবদান রাখে। 
  6. তাছাড়া হলুদ লিভার পরিষ্কার করে মাথার খুশকি কমায়, হলুদ ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
  7. হলুদের মধ্যে থাকা আন্টি এজিং এর গুণ বয়সের ছাপ কমায়, উচ্চ রক্তচাপে নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে এবং কাটা ও ক্ষতস্থান এই হলুদ লাগালেও আরাম পাওয়া যায়। 
  8. এছাড়াও নির্মিত হলুদ খাওয়ায় মাসিকের অনিয়ম ঠিক করে, পেটে আলসার, পাইলস বা অর্শ রোগ নির্ময় করতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে এই হলুদ।

সকালে হলুদ খাওয়ার উপকারিতা 

হলুদ হলে এমন একটি মসলা জানানো হবে আমাদের শরীরের জন্য উপকার নিয়ে আসে। হাজার বছর ধরে এটি মসলায় এবং ওষুধি ভেষজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ন্যাশনাল লাইব্রেরী অফ মেডিসিন রিসার্চ অনুসারে, হলুদের মধ্যে এমন রাগ সৈনিক জিনিস রয়েছে যা থেরাপি ইউনিক সুবিধা রয়েছে। এই পদার্থ গুলোকে কার্মিউমিনয়েড হিসেবে উল্লেখ করা যায়। হলুদের প্রাথমিক সক্রিয় উপাদান কার কিউমিন সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য।

আরো পড়ুন:এলোভেরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা


হলুদের সর্বাধিক ব্যবহার করা সর্বোত্তম উপায় হলো প্রতিদিন সকালে হলুদ পানি পান করা। ১ ইঞ্চি কাঁচা হলুদ ৫০ মিলি পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে হলুদ পানি তৈরি করতে পারেন। যদি আপনার বাড়িতে কাঁচা হলুদ না থাকে তবে হলুদের গোড়াও ব্যবহার করতে পারেন। স্বাদ এবং স্বাস্থ্যের সুবিধা বাড়াতে এর সঙ্গে আদা, লেবুর রস, গোলমরিচ বা মধু যোগ করতে পারেন।

হলুদ খাওয়ার নিয়ম 

হলুদ একটি মসলা জাতীয় উদ্ভিদ, কাঁচা হলুদ বা গুড়া হলুদ নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে খাওয়া হলে স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কাঁচা হলুদ সাধারণত সকালে খালি পেটে চিবিয়ে বা রস করে খাওয়া জন্য উপযোগী। তাছাড়া গুরু হলুদ রান্নার মাধ্যমে অথবা দুধ বা চায়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। তবে হলুদ খাওয়ার পূর্বে কিছু নিয়ম বা সতর্কতা জেনে রাখা উচিত। যেমন কিছু মানুষের হজমের সমস্যা আছে অথবা লিভারের সমস্যা রয়েছে তারা কাঁচা হলুদকে এড়িয়ে চলুন। সাধারণত সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদ চিবিয়ে খেতে পারেন অথবা কাঁচা হলুদের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। 

খালি পেটে কাঁচা হলুদ খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। তাছাড়া বেটে গোলমরিচের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন ও কাঁচা হলুদের রস করে খেতে পারেন। রান্নার সময় নিয়মিত হলুদ ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এক গ্লাস দুধের সাথে এক চামচ হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে খেলে ঠান্ডা ও কাশি থেকে অনেক উপকার পাবেন। আর এভাবে নিয়মিত মেনে হলুদ খেলে হলুদের উপকার পেয়ে থাকবেন তবে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে হলুদ খাবেন।

কাঁচা হলুদ খেলে কি ক্ষতি হয় 

কাঁচা হলুদ খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায় যেমন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও হজম হতে সহায়তা করে। পাশাপাশি ঠান্ডা ও কাশি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাছাড়া কাঁচা হলুদ ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। কাঁচা হলুদ খেলে যেমন উপকার পাওয়া যায় তেমনি ক্ষতিও রয়েছে হলুদে অতিরিক্ত কাঁচা হলুদ খাওয়া হলে গ্যাসের সমস্যা সম্ভাবনা রয়েছে ও বমি হতে পারে।

আরো পড়ুন:ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ করার উপায়


হলুদে প্রাকৃতিক ভাবে রক্ত পাতলা করার উপাদান রয়েছে, সেই ক্ষেত্রে যাদের রক্তপাত হয়ে থাকে তাদের জন্য সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া কিছু মানুষের হলুদ খেলে অ্যালর্জি দেখা দেয় এতে তোকে চুলকানি বা ত্বক ফুলে যায়। গর্ভবতী কালীন কাঁচা হলুদ খাওয়ার থেকে বিরত থাকুন কেননা কাঁচা হলুদ খেলে গর্ভবতী কালীন জরায়ু ঝুঁকি বাড়তে পারে।

কাঁচা হলুদ খেলে কি ফর্সা হয় 

কাঁচা হলুদ খেলে ফর্সা হয় এমন কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই, তবে কাঁচা হলুদ স্বাস্থ্যের জন্য ও ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। কাঁচা হলুদ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে এবং কালো দাগ দূর করতেও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। রোদের মধ্যে কাজ কিউ মিল নামক একটি উপাদান রয়েছে যার শরীরের বিষাক্ত উপাদান গুলো বের করতে সাহায্য করে। কাঁচা হলুদ খেলে রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সরাতে করে। 

হলুদ প্রদাহ ও ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে

কার কিউমিন হলো একটি বায়ো একটিভ অনু যা প্রদানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ফলে অনেক ধরনের অসুস্থতা দূরে থাকে। নিয়মিত হলুদ পানি পান করলে তা দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আপনাকে সাহায্য করবে। 

যদিও নির্দিষ্ট প্রমাণের জন্য অতিরিক্ত গবেষণা প্রয়োজন তবে কিছু ছোট গবেষণা যেমন পাবমেড সেন্ট্রাল এর এক গবেষণায় ইঙ্গিত দেয় যে, হলুদে পাওয়া কার কিউমিন ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধি এবং বিস্তার রোধ করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

হলুদ স্মৃতিশক্তি ও অন্ত্রের গতি উন্নত করে

ন্যাশনাল লাইব্রেরী অফ মেডিসিনের প্রাণীদের ওপর গবেষণা অনুসারে, কার কিউমিন মস্তিষ্ক থেকে প্রাপ্ত নিউরেট্রাফিক ফাক্টর নামক হরমোনের পরিমাণ বাড়ায়। এটি যদি শক্তি এবং শেখার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং স্নায়ু কোষের দীর্ঘায়ুতে সহায়তা করে। যদিও এই সুবিধাগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে পরীক্ষা করার জন্য আরো মানব গবেষণা প্রয়োজন, তবে প্রাথমিক ফলাফল গুলো উৎসাহজনক। 

নিয়মিত হলুদ পানি পান করলে তা গলব্লাডারের পিত্ত এবং অন্যান্য পাঠক এনজাইমের উৎপাদন বৃদ্ধি করে হজমের উন্নতি করে। দীপাক কুনতি এবং পেটে সমস্যা দূর করার পাশাপাশি হলুদ অন্ত্রের গতি উন্নত করতেও সহায়তা করে। জানাল অফ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল অ্যান্ড লিভার ডিজিজেস এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, কারকিউমিনের সঙ্গে মৌরি এসেন্সিয়াল অয়েল একত্রিত করলে আইবিএস এর সমস্যা কমে যায়।

লেখকের শেষ মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আশা করি আমাদের আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনযোগ সহকারে পড়ে হলুদের উপকার ও খাওয়ার নিয়ম পাশাপাশি অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আমাদের হলুদ উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হলে আপনার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনের কাছে আমার এই আর্টিকেল দিয়ে শেয়ার করে দিন। তাছাড়াও আমার ওয়েবসাইটটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন। এমন আরো আর্টিকেল পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো ও ভিজিট করুন। আজকে আমার এ আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন