প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা

প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। আমরা সকলে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া বা ইউরিন ইনফেকশনের সাথে কমবেশি পরিচিত। প্রায় প্রত্যেকটি ঘরেই প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার আক্রান্ত ব্যক্তি দেখতে পাওয়া যায়। এটি নারী-পুরুষ সকলেরই হয়ে থাকে। তবে নারীদের মাঝে এটি বেশি দেখা যায়। 

প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা


প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া মুলত একটি উপসর্গ, এটি কোন রোগ নয় সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে এটি হয়ে থাকে। আবার ছত্রাক বা ফাঙ্গাস দ্বারা আক্রান্ত হলেও এ প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া পুরুষ ও মহিলাদের হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেই প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার কারণ, লক্ষণ ও ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে। 

প্রেজ সূচিপত্র: প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার কারণ সমূহ


প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার কারণ সমূহ 

প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বিভিন্ন কারণে এই সমস্যা হয়ে থাকে। একে জন্যে একে কারণে এই ইনফেকশন টি হয়। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার হওয়ার মূল কারণ হলো পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা। পানি আমাদের দেহের বেশিরভাগ রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করে। অল্প পরিমাণে পানি পান নানাবিধ রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পর্যাপ্ত পানির অভাবে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হয়। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া সাধারণত তাদের মাঝে দেখা দেয় যারা দেহের প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পান করে না। নারীদের ক্ষেত্রে এই উপসর্গটি বেশ কষ্টদায়ক, মেয়েদের পায়ুপথের খুব কাছের মূত্রনালী অবস্থিত। যার ফলে বায়ু পথের মাধ্যমে অনেক ব্যাকটেরিয়া বা ফাংগাস মূত্রনালীতে প্রবেশ করে এবং জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে। 


নারীদের প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হওয়ার আরেক কারণ হলো মাসিক বা পিরিয়ড। প্রতিমাসেই মেয়েদের মাসিক বা পিরিয়ড হয়। সকলেই সে সময় ন্যাপকিন কিংবা কাপড় ব্যবহার করে। সেই ন্যাপকিন বা কাপড়ের সাথেও জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীতে প্রবেশ করে এবং সংক্রমণে সৃষ্টি করে। তাছাড়া সঙ্গির সাথে মেলামেশার হলেও প্রসবের জ্বালাপালা হতে পারে, তাই এসব কারণগুলো বের করে এর প্রতিকার করা অবশ্যক।

ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ 

প্রস্রাবের রাস্তার জ্বালাপোড়ার কারণ হলো ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ, ইউরিন ইনফেকশনের কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে। প্রথমত প্রস্রাবের সময় প্রচন্ড পেট ব্যথা এবং পিঠের নিচে ব্যথা অনুভূত হয়। প্রস্রাবের বেগ আসা সত্বেও পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রস্তাব না হওয়া এই উপসর্গের একটি লক্ষণ। তাছাড়া গন্ধযুক্ত ও ঘোলাটে এবং লাল রং সমন্বিত প্রস্রাব ও হয়ে থাকে। 

এই জ্বালাপোড়া অতিমাত্রায় বেড়ে গেলে জীবাণু দেহের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে পড়ে এবং কিডনিতে গিয়ে পাথর সৃষ্টি করে ফেলে। তাই এই সমস্যাকে বাড়তে দেওয়া উচিত নয়। প্রাথমিক অবস্থাতে দ্রুত চিকিৎসা করা প্রয়োজন।সাধারণ লক্ষণ দেখা দিলে বেশি বেশি করে পানি খেতে হবে।ঘরে বসেই এর প্রতিকার করা সম্ভব। 

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া বা ইউনিফেকশন রোধ করতে। প্রসাবে ইনফেকশন দূর করতে পানি পান করার বিকল্প নেই। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়ার মূল কারণ হলো পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করা।আমাদেরকে দৈনিক পানি বা তরল জাতীয় খাবারে প্রস্রাবের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এই প্রস্রাবের মাধ্যমে দেহের ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস বের হয়ে যায়। 

এছাড়াও দেহের জীবাণু সমূহ ও প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যায়।ফলে প্রস্রাবে ইনফেকশনের জ্বালাপোড়া দূর হয়ে যায়। প্রসাব জ্বালাপোড়া দ্রুত নিরাময়ের জন্য উষ্ণ গরম পানি খাওয়া ভালো এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত। পানি আমাদের দেহের বেশিরভাগ রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করে। ফলে পর্যাপ্ত পানি পান প্রস্তাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে সাহায্য করে।

প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খাওয়া

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে শাক-সবজি অন্ত নেই। শাক-সবজির মাঝে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে। যা আমাদের দেহের প্রয়োজনীয় পানির অভব পূরণ করে দেয়। দৈনিক খাদ্যের তালিকায় আমিষর পরিমাণ কমিয়ে শাক-সবজির পরিমাণ বাড়ানো উচিত কিছু কিছু শাক- সবজি আমাদের দেহের শতকরা চাহিদাও মেটাই।


তাই প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি খেতে হবে। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে শাক সবজির কোন বিকল্প নেই। শাক-সবজি খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে রোগ জীবাণু সমূহ ও প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যায় এবং প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে সাহায্য করে। 

গরম চাপ ব্যবহার করার মাধ্যমে

গরম চাপ ইউরিন ইনফেকশন দূর করতে এবং পেট ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। হট ওয়াটার শরীরের ব্যথার জন্য খুব উপকারী একটা জিনিস। আর এই হট ওয়াটার ব্যাগ কিংবা কাপড় গরম করে তলপেটে ও এর আশেপাশে এবং পিঠের নিচে অংশে লাগাতে পারেন,এতে ব্লাডের উপরের অতিরিক্ত চাপ কমে যাবে এবং ব্যথা অনেকটা কমে যায়। গরম চাপ ব্যবহার করার মাধ্যমে শরীরের অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়।

তাছাড়াও বাজারে আজকাল হিটিং প্যাড পাওয়া যায়। অনেক ভালো একটা পদ্ধতি যা ব্যবহারে মাসিক বা পিরিয়ডের সময়  হিটিং প্যাড ব্যবহার করতে পারে এতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয় না। তাই প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া আক্রান্ত নারীরা হিটিং প্যাড ব্যবহার করে। এতে তলপেটের ব্যথা দূর হওয়ার পাশাপাশি প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া বা ইউরিনি ইনফেকশনও দূর হয়ে যাবে। 

পানি শূন্যতা দূরী ভূত করা

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী হচ্ছে পানি শূন্যতা। আমাদের দেহের প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পান না করলে খুব দ্রুত ইউরিন ইনফেকশন হয়ে যায়। আমাদেরকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া রোধে পানি পান করার কোন বিকল্প নেই। দেহের জীবাণু সমূহ ওসবের সাথে বের হয়ে যায়।ফলে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর হয় ।

আমাদেরকে দৈনিক দিনে ৭থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করলে খুব সহজেই প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর হবে। তাছাড়া পানি জাতীয় ফল বেশি বেশি করে খেতে হবে। যেমন তরমুজ,আম,আপেল,আঙ্গুর,আনারস,নাশপাতি,ডাব,ফলের রস,খাবার স্যালাইন ইত্যাদি খেলে পানি শূন্যতা কমে। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া অনেকটা কমে যায।

দই খাওয়ার মাধ্যমে

দই খাবার মাধ্যমে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে খুবই উপকারিতা পাওয়া যায়। মিষ্টি দই এবং টক দই উভয় রয়েছে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়া আমাদের দেহের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে দেয়। এবং জীবনগুলো বিনাশ করে। তাই প্রতিদিন আমাদেরকে দই খাওয়া অভ্যাস করতে হবে। দিনে ১ থেকে ২কাপ করে দই খেতে হবে তাতে অনেক উপকারিতা পাওয়া যাবে।

সামান্য কিছু ঘরো পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা খুব সহজে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করা সম্ভব। বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদের মাধ্যমে নিম পাতার রস ও চিরতার রসে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করে। তাছাড়া ও বিভিন্ন মসলা মিশ্রণ, যেমন আদার রস ও জিরার গোড়া মিশিয়ে হালকা গরম পানি দিয়ে পান করলে ইউরিন ইনফেকশন বা প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর হয়ে যায়। তাই এই প্রস্রাবের জ্বালাপড়া সমস্যা বেশি বাড়তে দেওয়া যাবে না। তাই আমরা আজ থেকেই উপরোক্ত উপায়গুলো অবলম্বন করি। 

ধনে বীজ খাওয়ার মাধ্যমে

ধনেবীজেও চমৎকার ঘরোয়া প্রতিকার ও জ্বালাপোড়া বা বেতনাদায়ক প্রস্রাবের উপশম করতে সাহায্য করে। এই বীজের অ্যান্টিবায়োটিক্যাল বৈশিষ্ট্য মূত্রনালীর সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়াও ধনিয়া বীজ ক্ষতিকার ক টক্সিন গুলির নিকোণ ব্যবস্থাকে পুরস্কার করে এবং স্বাভাবিক প্রসাব করতে সহায়তা করে। এছাড়াও একটি শরীরের অত্যাধিক তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে যা অবস্থাকে আরো খারাপ করে তুলতে পারে।

দুই চা চামচ ধনে বীজ এক কাপ পানিতে যখন ফুটিয়ে ঠান্ডা করে ছেকে নিন এবং দিনে দুইবার পান। এক কাপ জলের সাথে তিনটা চামচ ধনে বীজের গোড়াও যোগ করতে পারেন এটি ঢেকে দিন এবং সারারাত ভিজাতে দিন। পরের দিন সকালে সামান্য গুড় যোগ করুন এবং ঈদ দ্রবণ এক কাপ করে দিনে তিনবার পান করুন।

মেথি বীজ খাবার মাধ্যমে

প্রস্রাবে রাস্তায় জ্বালাপোড়ার ঘরোয়া উপায়ের মধ্যে মেথির বীজ ও অত্যন্ত কার্যকরী। মেথির বীজ বেদনাদায়ক প্রস্রাবের একটি আয়ুর্বেদিক প্রতিকার। মেথির বীজ যৌনী পি এইচ উন্নত করে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। মেথির বীজ শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে। আধা চা চামচ মেথির গুড়া বাটার মিল্কে সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন দুবার পান। 

এছাড়াও মেথির বীজের সাথে মধু মিশিয়ে প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার খান। তাছাড়া এক চা চামচ মেথির বীজ সারারাত ভিজিয়ে রাখুন ছেকে নিন মধু যোগ করুন এবং খালি পেটে পান করুন। মেথির বীজ একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিয়াল হিসেবে কাজ করে, যা ব্যাকটেরিয়া কোষের দেয়াল গুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি প্রদান করে।

লেখকের শেষ মন্তব্য 

প্রস্রাবে রাস্তায় জ্বালাপোড়া করার সমস্যা যদি জটিল আকার ধারণ করে তাহলে এসব খাবারের পাশাপাশি দ্রুত চিকিৎসরের পরামর্শ নিন। মনে রাখতে হবে সমস্যা শুরুতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে সহজে রোগ নিরাময় করা যায়। আর আমার এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ন পরার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমার এ আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজনের কাছে শেয়ার করে দিন, এবং আমার ওয়েবসাইটটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন