চিরতা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

আপনি কি চিরতা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। এই আর্টিকেল টির মাধ্যমে আমরা চিরতা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। তাই এই সম্পর্কে জানতে সম্পন্ন আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আমরা সকলে কমবেশি চিরতার ভেষজ গুণাবলী সম্পর্কে অবগত রয়েছি।

চিরতা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
এটি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় পাওয়া যায়। তবে এটি সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত হয়েছে ইউরোপে, বিনোদ ওষুধি গুণসম্পন্ন এই গাছের পাতাও শিকড়ের স্বাদ তিক্ত ধরনের কিন্তু এর ফল মিষ্টি হয়ে থাকে। নিচে চিরতার খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো

পেজ সূচিপত্র: চিরতা খাওয়ার উপকারিতা


চিরতা খাওয়ার উপকারিতা

রাতে এক গ্লাস চিরতা পানিতে ভিজিয়ে রেখে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে চিরতা ভেজানো পানি খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং এতে বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। চিরতার রক্তস্বল্পতা দূর করে যাদের শরীরের রক্তশূন্যতা দেখা দেয় তারা নিয়মিত চিরতা খেতে পারেন। এটি শরীরে নতুন রক্ত কোষ গঠন করতে সাহায্য করে রক্তশূন্যতা দেখা দিলে নিয়মিত সকলের চিরতা ভেজানো পানি পান করলে শরীরের রক্ত তৈরি হয় এবং রক্তশূন্যতা সহজে দূর হয়। এছাড়াও চিরতা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর কারণ চিরতার রক্তে থাকা সুগার এবং চিনির মাত্রা আস্তে আস্তে কমিয়ে দেয়। আর যাদের ডায়াবেটিস নেই তারা খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। 

চিরতা এলার্জি সমস্যা দূর করে। এলার্জি সমস্যা যারা ভুগছেন ওষুধ খেলেও সমাধান পাচ্ছেন না তারা চিরতার পানি খেতে পারেন। এলার্জি সমস্যা দূর করতে চিরতা ভেজানো পানি বেশ কার্যকরী। তাছাড়াও আমাদের শরীরের নানা সময় বিভিন্ন ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ করে চিরতা এসব রোগ প্রতিরোধ করতে অত্যন্ত কার্যকরী। চিরতা আমাদের শরীরকে যে কোন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে রক্ষা করে। আর যে কোন তেতো খাবার কোন ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সংক্রমণ হতে দেয় না। চিরতার লিভার পরিষ্কার রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। যারা লিভারের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তারা নিযুক্ত চিরতার পানি পান করুন। এতে লিভারের সমস্যা দূর হয়ে যাবে এবং সুরক্ষিত থাকবে।

চিরতা খাওয়ার নিয়ম ও ব্যবহার 

চিরতা খাওয়ার সাধারণত নিয়ম হলো রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস পানিতে পাঁচ থেকে সাত গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে। তারপর ঘুম থেকে উঠে সকাল বেলা ছেকে নিয়ে পানি পান করতে হবে। আবার রাতে ঘুমানোর আগে পান করতে পারেন। যারা নিয়মিত চিরতার পানি পান করেন তাদের জন্য এটি রাতে ঘুমানোর পূর্বে এক গ্লাস পানিতে ৫-৬ গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে দেখে সকালে সেই পানি খেতে পারেন। এছাড়াও জ্বর ভালো করার জন্য ৬-৭ কাপ গরম পানিতে চিরতা ভালোভাবে সিদ্ধ করে সেই পানি ততক্ষণ পর্যন্ত জাল দিতে হবে যাতে করে পানির পরিমাণ দুই কাপ হয়। এবার সেই পানি সকাল ও সন্ধ্যার অর্ধেক করে খেলে ভালো উপকার মিলবে। 

আরো পড়ুন:সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা


তাছাড়া ও চিরতা দিয়ে চুল পড়া রোধ করতে চাইলে রাতে গরম পানিতে চিরতা ভিজিয়ে রেখে সকালে তা ছেঁকে নিয়ে সেই পানি নিয়ে দিয়ে ভালোভাবে মাথা ধুতে হবে তাহলে চুল পড়া কমে যাবে। অনেকেরই চুলকানি সমস্যা রয়েছে সে ক্ষেত্রে ১০০ গ্রাম সরিষার তেল চুলায় ভালো করে গরম করুন। এবার সেখানে বিশ গ্রাম মতো চিরতা দিয়ে দিন। চিরতা ভাজা ভাজা হয়ে গেলে তার চুলা থেকে নামিয়ে ছেঁকে নিন। এবার তেল চুলকানির স্থানীয় হালকা মালিশ করে লাগিয়ে নিন কিছুদিনের মধ্যেই ভালো উপকার পাওয়া যাবে।


চিরতা কতদিন খাওয়া যায় 

কোন ভেষজ উদ্ভিদের একটানা অনেকদিন খাওয়া উচিত নয়। কেউ না এদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। তেমনি চিরতা ও একখানা বেশি দিন খাওয়া উচিত নয়। ৮ থেকে ১২ দিন খেলেই এটি থেকে উপকার পাওয়া যাবে। তবে চিরতা আপনি একটানা সর্বোচ্চ ১৫ দিন খেতে পারেন। এর বেশি সময় করে খেলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

চিরতা খুবই তিতা হওয়ায় কারণে দীর্ঘদিন এটি খাওয়ার ফলে শরীরের বিভিন্ন রোগের সমস্যা তৈরি হতে পারে। যেমন অতিরিক্ত চিরতা খাওয়া হলে যৌন সমস্যা ও কিডনির সমস্যা হতে পারে। তাই চিরতা খাওয়ার ক্ষেত্রে একটানা সর্বোচ্চ ১৫ দিন খাওয়ার পর আবার ১৫ দিন বিরতি দিয়ে খেতে হবে। তাহলে এর থেকে ভালো উপকার পাওয়া সম্ভব।

খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা 

চিরতা হলো এক ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। আমরা অনেকেই চিরতার গুনাগুণ সম্পর্কে ধারণা রাখি না। আবার অনেকেই জানার পরও এর তিতা স্বাদের কারণে গ্রহণ করি না। তবে খালি পেটে চিরতা খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন খালি পেটে ছিল তা পানি খেতে পারেন এতে হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং বদ হজম হওয়ার সমস্যা কমে যাবে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিরতার পানি খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পানি নিতে খেলে থাকবে কেননা একটি রক্তে সুগারের মাত্রা কমিয়ে দেয়। 


এছাড়াও জ্বর সর্দি কাশি দূর করতে চিরতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এইজন্য সকালে এক গ্লাস চিরতার পানি পান করলে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যাদের এলার্জি সমস্যা রয়েছে তারা নিয়ম করে সকালে খালি পেটে চিরতার রস ও মধু খাবেন এতে দারুন উপকার পাবেন। আমাদের অ্যানিমিয়ার সমস্যা রয়েছে এবং রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম রয়েছে তারা প্রতিদিন নিয়ম করে চিরতার রস খাবেন এতে করে অ্যানিমিয়ার সমস্যা দূর হয়ে যাবে। 

চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করে 

চিরতা একটি ওষুধি উদ্ভিদ এটি মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। নিয়তি ছিল তা খাওয়ার ফলে নানা রকম রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে দীর্ঘদিন যাবত চিরতা খাওয়ার ফলে কিডনির নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যারা কিডনি রোগী আছেন তারা অতিরিক্ত চিরতা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। 

কেমন আছো তা খবর বলে তাদের নানা ধরনের কিডনির জটিল রোগ হতে পারে। তবে তারা চাইলে সামান্য পরিমাণে চিরতা খেতে পারেন তবে অবশ্যই তা ১৫ দিন পর পর খাওয়া বাদ দিয়ে আবার ১৫ দিন পর পর খাওয়া শুরু করতে হবে। এক টানা ১৫ দিনের বেশি কোন অবস্থাতে খাওয়া যাবে না।

চিরতা খাওয়ার অপকারিতা 

চিরতা আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী এটি খেলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর হওয়ার পাশাপাশি শরীর সুস্থ থাকে। তবে সব জিনিসেরও কিছু না কিছু অপকারিতা রয়েছে। চিরতার তেমনি কিছু অপকারিতা রয়েছে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিরতা খুব উপকারিতা হলেও এটি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ অনেক কমে যেতে পারে। যার ফলে ডায়াবেটিস রোগীরা বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন। 

কোন কিছুই অতিরিক্ত খাওয়া ভালো নয় তেমনি চিরতা অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে পেটে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। অতিরিক্ত চিরতা খাওয়ার ফলে যৌন ক্ষমতা কমে যেতে পারে এছাড়াও একটানা চিরতা খাওয়ার ফলে কিডনিতে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। চিরতা স্বাদ তিতা হওয়ার কারণে একটি খাবার ফলে অনেকেরই বমি হতে পারে। এছাড়া গর্ভবতী মেয়েদের ক্ষেত্রে কেবল চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এটি খাওয়া যেতে পারে অন্যথায় এটি খাওয়ার কারণে বিপদ হতে পারে।

চিরতা হজমের সমস্যা দূর করে 

চিরতা হজমের সমস্যা দূর করে, হজমের সমস্যা দূর করতে  চিরতার উপকারিতা অনেক বেশি । যেকোনো খাবার ঠিকমতো হজম না হলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায় তার মধ্যে এসিডিটি বদহজম কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেট ব্যথার মতো নানা সমস্যা হতে পারে। তাই হজম-জনিত সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত ছিল তার পানি পান করুন।

এছাড়াও চিরতা ত্বকের যত্নে বেশ উপকারী একটি জিনিস। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা থেকে যেমন ব্রণ ও কালো দাগ ত্বকের ইনফেকশন দূর করতে নিয়মিত চিরতা ভেজানো পানি পান করতে পারেন। ত্বক আকর্ষণীয় উজ্জ্বল হবে তাছাড়া নিয়মিত চিরতার পানি পান করলে বয়সের ছাপ দূর হয় তাই তারুণ্য ধরে রাখার জন্য নিয়মিত চিরতার পানি পান করতে পারেন।

চিরতা এলার্জি সমস্যা দূর করে 

চিরতরে এলার্জি সমস্যা দূর করে থাকে। ওষুধের সমাধান পাচ্ছেন না তারা নিয়মিত চিরতার পানি পান করতে পারেন। এলার্জি দূর করতে চিরতা ভেজানো পানি বেশ কার্যকরী উপাদান। অনেকের এলার্জির কারণে শরীরের লাল হয়ে যায় এবং শরীর ফুলে যায়। এক্ষেত্রে শ্রোতা পরিমান মত দিয়ে এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিন। পরের দিন খেয়ে পানি ঘুম থেকে উঠে পান করতেন এবং সারা দিনে দুই থেকে তিনবার পান করতে পারেন। এতে এলার্জি সমস্যা দূর হয়ে যাবে। 

এছাড়াও চিরতার সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। আমাদের শরীরের নানা সময় বিভিন্ন ভাইরাস ব্যক্তিরা সংক্রমণ করে। ফলে আমরা অসুস্থ হয়ে যাই এই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে বাঁচতে চিরতা খেতে পারেন। চিরতা আমাদের শরীরকে যে কোন ব্যক্তিরা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। আর যে কোন তেতো খাবার কোন ব্যক্তিরা বা ভাইরাস সংক্রমণ হতে দেয় না। তাই নিয়মিত চিরতরে যেন পানি পান করলে সংক্রমণ থেকে বাঁচা যায়। 

লেখকের শেষ মন্তব্য

সুপ্রিয় পাঠক বন্ধু আশা করি পোস্টটি পড়ে বুঝতে পেরেছেন চিরতার উপকারিতা ও এর খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। আমার এই আর্টিকেলটি পরে যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয় স্বজনের কাছে শেয়ার করে দিন। আপনি আমার এই ওয়েবসাইটটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন। আমার এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ন পরার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন